আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

আজ ১০ই অক্টোবর। আজকের এই দিনটি স্মরণ করা হয় ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ হিসাবে। আমাদের দেশে আজও এই মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাপারটাকে খুব বেশি গুরুত্বই দেওয়া হয় না। মানসিকভাবে অসুস্থ কোন ব্যাক্তিকে আপাত দৃষ্টিতে সবাই মনে করে হয়তো সে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন ব্যাক্তি যে সমাজে বসবাস করার উপযোগী নয়, সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহনে অক্ষম, এমনকি আমাদের পরিবারেও এমন কেউ থেকে থাকলে তাকেও হয়তো আমরা কখনো কখনো অগ্রাহ্য করি। কিন্তু এই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও সচেতন তো দূরহস্ত, বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টাও করা হয়ে ওঠে না। আজ গায়ে ব্যাথা,কাল মাথা ব্যাথা, পরশু পায়ে ব্যাথা এছাড়াও নিত্যদিনের ছোট খাটো স্বাস্থ্যের অবনতি দেখলেই আমরা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হই। কিন্তু মন ভালো না থাকলে আমরা কজনই বা ডাক্তারের কাছে যাই বলুন তো? কিন্তু সেখানেই যে গোড়ায় গলদ। আমাদের শরীর ও মন কিন্তু অঙ্গাঙ্গীকভাবে জড়িত। শরীরের প্রতি যত্ন নিলেও মনের প্রতি যত্ন নেওয়াও কথা খুব কম সংখ্যক মানুষই ভাবেন। অথচ এই অবহেলার ফল হয়ে ওঠে মারাত্মক।

আজ শনিবার (১০ অক্টোবর) সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য: অধিক বিনিয়োগ-অবাধ প্রবাহ।’  বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হলো পৃথিবীর সবার মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতার দিন। ১৯৯২ সালে প্রথমবার এ দিবসটি পালন করা হয়। কিছু দেশে একে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। আপনি কি জানেন এই বিষয়ে সচেতনতার দিক থেকে ভারতের স্থান কত? জেনে নিন, উত্তর টি কিন্তু খুবই সঙ্কটজনক। গোটা বিশ্বের রির্পোট দেখে জানা যায় ভারতের স্থান সবার উর্ধে অবসাদগ্রস্ত দেশ হিসাবে। এই দেশে প্রতি সাত জনের মধ্যে একজন মানসিক অসুখের শিকার।

এমতাবস্থায় শুরু হয় মহামারী। প্রায় আট মাস ধরে চলছে গৃহ বন্দী জীবন। বন্ধ হয়ে গেছে পরিবার-পরিজনদের সাথে দেখা। বন্ধু-বান্ধব রাও আজ শুধু মুঠোফোনে বন্দী। মানুষে মানুষে যে মানসিক মিলন তা আজ অধরা। কোথাও যেন একটা চরম মিথষ্ক্রিয়ার অভাব। স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে অফিস-কাছারি, সিনেমা হল, পাড়ার চায়ের দোকান আজ সব ই প্রায় বন্ধ। এমনকি পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষটি যে কে সেটিও চেনা যায় না, কারণ সেটিও মাস্কের আড়ালে ঢাকা। তার ওপর আবার অগনিত মৃত্যু মিছিল যা মনকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। নিজের পরিবারের লোক করোনা আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে দেখতে দেওয়া তো দূরহস্ত, রোগীর মৃত্যু হলেও শেষ দেখার সুযোগ টাও মেলা দায়। আবার বাড়ির পাশের লোকটি আক্রান্ত হলে অসচেতনতা বশত তার পরিবারের কাছে খাবার টুকু পৌঁছে দেওয়ার লোকজনও পাওয়া যাচ্ছে না। রোগের জ্বালায় যতোনা মানুষ কষ্ট পাচ্ছে তার থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছে মানসিক জ্বালায়। অবশ্য এ রোগটাই এমন নিষ্ঠুর, যে পাশে কাউকে থাকতেই দেয়না। সমস্ত কর্ম-সংস্থান গুলির হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ কর্মী অকালে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে পরিবারের মুখে দুটো ভাত কীভাবে তুলে দেবে সেই চিন্তায়। কত বেকার ছেলে জীবন দিয়েছে এই লকডাউনে, চাকরি টা আর হবেনা ভেবে- সব পরীক্ষাই যে স্থগিত। লকডাউনের এই সময়টিতে মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুন বেশি। একটি বেসরকারি সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে লকডাউনের মধ্যে সংক্রমণের ভয়, একাকীত্ব এবং ঘরে ফিরতে না পারার কষ্টে আত্মহত্যা করেছেন অন্তত ১৩৩ জন।

এবছর তাই এই দিনটি একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এইসময় মানুষ যদি মানুষের পাশে না থাকে তাহলে এই মহামারির থেকেও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে মানসিক অসুখ। অর্থনৈতিক ভাবে বিভিন্ন ভাবে সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে যাতে খাবারের চিন্তায় কাউকে প্রাণ না দিতে হয়। এছাড়াও এইসময় সোস্যাল ডিস্টেন্সিং বজায় রেখে অথবা ঘরে থেকেই যোগাযোগ রাখুন প্রতিদিন নিজের পরিজন-বন্ধুদের সাথে। কোভিড-১৯ -এ হারানো পরিজনদের পাশে দাঁড়ান, মানসিকভাবে সার্পোট দেওয়ার চেষ্টা করুন। যতটুকু পারেন নিজের সাধ্যমতো কাজ হারা মানুষ গুলোর সাহায্য করুন। বাড়িতে বসে নিজের সখ, ইচ্ছের গুলোর প্রতি জোর দিন, যেগুলো ব্যাস্ত জীবনে হারিয়ে গিয়েছিলো৷ গান শুনুন মন ভরে কারণ মন ভালো রাখার মক্ষম ওষুধ। যোগাসন করে মন শান্ত রাখুন।

আসুন আজকের দিনটিতে প্রত্যেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, সকলে সকলের পাশে থাকার। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। প্রিয়জনের মনের কথা শুনুন, সময় দিন তাকে। দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি এই অন্ধকার সময় থেকে আমরা মুক্তি পাবো। গড়ে উঠবে এক সুস্থ পৃথিবী।

Leave a Comment