শরীর দুটো এদিকে হৃদয় একটা, বিরল যমজ জন্ম নিল এনআরএসে
নিজস্ব প্রতিবেদন, শরীর দুটো এদিকে হৃদয় একটা, এরকমই এক বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল। অনিমা ঘোষ নামক এক প্রসূতি প্রসবযন্ত্রণা নিয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হলে তিনি যমজ দু’টি সন্তানের জন্ম দেন। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু চমকের শুরু হয় বাচ্চা দু’টির শারীরিক গঠন দেখে। দেখা যায় বাচ্চা দু’টি জোড়া, চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী যাকে কনজয়েনড্ বা সায়ামিজ্ টুইন্স বলা হয়। আলাদা আলাদা শরীর হলেও পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখেন, সদ্যোজাত দু’টির হৃৎপিণ্ড একটিই! অর্থাৎ একই হৃৎপিণ্ডের সাহায্য নিয়ে শিশু দুটি বেঁচে রয়েছে। এই ঘটনা দেখে চিকিৎসকসহ সকলেই অবাক।
এই ঘটনা মনেকরিয়ে দেয় “গঙ্গা-যমুনা”র কথা। করোনা আবহের মধ্যে সবরকম নিরাপত্তা আর প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার বাগুইআটি র বাসিন্দা ২১ বছরের অনিমা ঘোষের অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। এনআরএস সূত্রে খবর, যমজ দুই সদ্যোজাত আপাতত SNCU-তে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছে। ভালো আছে। ভালো আছেন মা’ও। একটি হৃদযন্ত্র কিন্তু দুটি সম্পূর্ণ শরীর নিয়ে জন্মানো এই বিরল যমজ সদ্যোজাত এখন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দিয়েছে NRS হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সেখানকার প্রসূতি ও শিশু বিভাগের একদল চিকিৎসককে।
যমজ শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জোড়ার ঘটনা এর আগেও অবশ্য অনেক দেখা গেছে। কারও ক্ষেত্রে হাত জোড়া থাকে, কারও পা, আবার অনেক ক্ষেত্রেই মস্তিষ্ক জোড়া অবস্থায় থাকার উদাহরণও দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই পেট জোড়া লেগে থাকার ঘটনাও ঘটে। তবে একরম এক হৃৎপিণ্ড, দুই শরীরের ঘটনা সত্যিই বিরল। সাধারণত প্রতি ৬০,০০০ সদ্যোজাতের মধ্যে ১ টি কনজয়েনড্ জন্ম নেয়। কিন্তু অধিকাংশই জন্মের আগে বা জন্মের মুহূর্তেই মারা যায়। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে বেঁচে যাওয়া সদ্যোজাতের সেই সংখ্যা প্রতি দু’লক্ষে একজন। তাও অনেক ক্ষেত্রেই জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই অনেকে মারা যায়। কিন্তু এই সদ্যেজাত দু’টি শারীরিকভাবে যথেষ্টই সুস্থ।
এক হার্ট বিশেষজ্ঞ ডঃ তাপস রায়চৌধুরী বলেন, এমআরআই, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট, সিটি স্ক্যান করে চিকিৎসকদের প্রথমে আরও ভালো করে পরিকল্পনা করা দরকার কিভাবে শিশুগুলির অস্ত্রোপচার করা যায়। দু’টি শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে অস্ত্রোপচার করতে নিলে তার ফল ইতিবাচক নাও হতে পারে। তাই এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির সকল সদস্য মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার কী করা হবে। তবে একান্তই যদি প্রতিস্থাপনযোগ্য নতুন হৃৎপিণ্ড যোগাড় না করা যায় তবে একটি শিশুকে বলিদান করতেই হবে।