মনে প্রাণের ক্ষণিকের শান্তির জন্য আমরা প্রায় সকলেই ছুটে যাই মা ভবতারিণীর কাছে। সত্যি দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর মন্দির যেন প্রাণ কে জুড়ায়, মন কে শীতল করে। মা ভবতারিণীর স্বপ্নাদেশে রানী রাসমনি গঙ্গা পাড়ে দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দির টি মূল মন্দির অর্থাৎ যেখানে মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত, নাটমন্দির, রঘুবীরের মন্দির সহ শিব মন্দির নিয়ে নির্মিত হয়। পরবর্তীকালে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সমাধি স্থান ও মন্দির সংলগ্ন এলাকাতেই হয়। এই মন্দিরের একদম হুবহু দেখতে আরও একটি মন্দির আছে যেটি দেখতে গেলে যেতে হবে ব্যারাকপুরে। এটি হলো মা অন্নপূর্ণার মন্দির। এ যেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের রেপ্লিকা। কিন্তু এ মন্দিরের ও ইতিহাস রয়েছে তা মূল মন্দিরের থেকে অনেকটাই ভিন্ন।
উত্তর চব্বিশ পরগনার মহকুমা শহর তালপুকুর এলাকায় অবস্থিত – গঙ্গার ঠিক পাশেই (ব্যারাকপুর) অবস্থিত এই অন্নপূর্ণা মন্দির। মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বারটি পূর্ব দিকে। গেট দিয়ে প্রবেশের পরে নবরত্ন মন্দিরটি আপনার ডানদিকে এবং নাটমন্দিরটি বাম দিকে পড়বে । ছয় আছলা (আটটি ছাদযুক্ত) শিব মন্দিরগুলি সহ পুরো মন্দির চত্ত্বর প্রায় ৫৫ বিঘা জমি জুড়ে রয়েছে এবং একটি শান্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে মন্দির ঘিরে।
ইঁটের তৈরি এই মন্দির টির ১৮৭০ সালে নির্মানের কাজ শুরু হয়, শেষ হতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ বছর।উদ্বোধনটি ৩০ শে চৈত্র, ১২৮১-এ হয়েছিল, যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৮ই এপ্রিল, ১৮৭৫; দক্ষিণেশ্বর মন্দিরটি খোলার প্রায় দুই দশক পরে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব উপস্থিত ছিলেন অন্নপূর্ণা মন্দিরের উদ্বোধনের দিনে। মন্দিরের জন্য জমি বাছাইয়ের কাজও তিনিই সম্পন্ন করেন। কথিত ছিল যে পূর্বে গঙ্গার ওপারে শ্রীরামপুরকে মন্দিরের জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সুন্দর নবরত্ন মন্দিরটি নির্মাণের জন্য চনক (ব্যারাকপুরের পুরাতন নাম) চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন রানী রাসমনির কনিষ্ঠ কন্যা জগদম্বা ও তাঁর স্বামী মথুর মোহন বিশ্বাস।
মন্দিরের গর্ভের ভিতরে দেবী অন্নপূর্ণা এবং শিবের মূর্তি রয়েছে। সিংহাসনে যে জায়গাটি ( বেদী ) আছে তা সাদা পাথরের তৈরি এবং সিংহাসন রৌপ্য দিয়ে তৈরি। দেবী অন্নপূর্ণার মূর্তি অষ্টোধাতু দিয়ে তৈরি হয়েছে, মহাদেবের মূর্তিটি রুপো দিয়ে তৈরি।কথিত আছে, মন্দিরের প্রবেশপথের তোরণের উপর যে সিংহটি রয়েছে, সেটি সরিয়ে ফেলার জন্য এক সময় ব্রিটিশ প্রশাসন মন্দিরের উপর নানা রকম চাপ সৃষ্টি করেছিল। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে আদালতের রায়ে সেটি যথাস্থানেই রয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন সকালে সোয়া পাঁচটায় মঙ্গল আরতি হয়।ভোগে ভাত, ভাজা, দুই প্রকারের তরকারি, ডাল, মাছ, চাটনি , মিষ্টি দই, পায়েশ নিবেদন করা হয়। বিকেলে ভোগ শেষ হলে মন্দিরটি বন্ধ হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় সন্ধ্যা আরতির জন্য খোলে।সন্ধ্যা আরতির সময় সুজি, মিষ্টি, দুধ, লাড্ডু ও বোদে দেবী অন্নপূর্ণাকে দেওয়া হয়। অন্নপূর্ণা পূজা প্রতিবছর আড়ম্বরপূর্ণ এবং জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়।
ইছে হচ্ছে তো এই মন্দিরে একবার দর্শণে যেতে? চট করে ঠিকানা টা পড়ে নিন তবে। ট্রেন এবং বাস উভয় পথেই মন্দিরে পৌঁছানো যায়। নিকটতম রেলস্টেশন ব্যারাকপুর। এখান থেকে যে কেউ একটি অটো ভাড়া করে তালপুকুরে আসতে পারে; ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড পার হয়ে কয়েক মিনিটের পথ। পর্যায়ক্রমে শ্যামবাজারের পাঁচ পয়েন্ট ক্রসিং থেকে ব্যারাকপুরের দিকে কোনও বাসে উঠুন। তালপুকুর স্টপেজ থেকে নেমে বাম দিকের রাস্তা ধরুন এবং আপনি মন্দিরে পৌঁছবেন।