করোনার জেরে জেরবার হয়ে উঠেছে রোজকার জীবন। চার দেওয়ালে বন্দী হয়ে গেছে মানব সমাজ। এই অবস্থায় যেখানে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকাটাই প্রতিনিয়ত একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে সেখানে বেড়ানো টা মানুষের কাছে এখন বিলাসিতা। তাও তো ভ্রমণ পিপাসুদের মন কে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়। আললক ৫ শুরু হওয়ার সাথে সাথে বেশ কিছু ভ্রমণের স্থান খোলা হয়েছে। চালু হয়েছে বেশ কিছু ট্রেনও। তাছাড়া কাছাকাছি ডেসটিনেশন গুলোতো প্রাইভেট গাড়িতে অনেকের ঘুরে আসছে দু-এক দিনের জন্য। সামনেই আসছা শীত। আজ এক চোখ ধাঁদানো জায়গার গল্প শোনাবো। শুনলেই মন টা যাবো যাবো রব তুলতে বাধ্য। শীতের শুরুতেই মানে পূজোর পরেও যে টানা কিছুদিন ছুটি পাওয়া যায় সেই সময়টা ঘুরে আসতে পারেন মাইথন ড্যাম।
উইকএন্ডের ছুটিতেই ঘুরে আসতে পারেন বাংলা-ঝাড়খণ্ডের সীমানায় অবস্থিত এই এলাকা থেকে। কলকাতা থেকে দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। সড়কপথে কলকাতা থেকে মাইথন ২৩৪ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৫ ঘণ্টা। এছাড়াও রয়েছে ট্রেন। নিজস্ব গাড়ি না থাকলে ট্রেন হতে পারে যাতায়াতের সেরা মাধ্যম। ট্রেনে গেলে নেমে পড়ুন বরাকর বা কুমারডুবি স্টেশনে। সেখান থেকে অটো বা গাড়ি ভাড়া পাবেন মাইথনে যাওয়ার জন্য। কুমারডুবি থেকে মাইথনের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। বরাকর থেকে মাইথনের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার।
মাইথনে ঘোরার জায়গা বলতে প্রধানত মাইথন ড্যাম। শীতে মাইথন ড্যামকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। মজুমদার নিবাসের সামনেই রয়েছে বরাকর নদীর বুকে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা। মাইথন ড্যামের পাশেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক। এছাড়াও রয়েছে মিলেনিয়াম পার্ক। শীতকালে এই জায়গায় মেলা বসে। পুষ্পমেলার আয়োজন করে ডিভিসি। মাইথন ড্যাম পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের সীমানায় ঢুকলে মিলবে বোটিং-এর আরও ব্যবস্থা। ড্যামের পাড়ে রয়েছে ফুড-পার্ক। একটু এগিয়ে ড্যামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে বরাকর নদীর বিস্তীর্ণ পাড়, যেখানে গিয়ে বসলে বরাকরের চঞ্চল ঢেউ মন ভরিয়ে দেবে। বরাকর নদীর বুকেই রয়েছে চামচ দ্বীপ, সবুজ দ্বীপ। ডিভিসি সবুজ দ্বীপে পার্কও তৈরি করেছে। এই দুই দ্বীপেই পৌঁছতে হয় বোটিং করে।
মাইথনে রয়েছে আদি কল্যাণেশ্বরী মন্দির। ডিভিসি-র হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট। এই পাওয়ার স্টেশনে ঢুকতে গেলে কলকাতায় ডিভিসি অফিস থেকে অথবা মাইথনে ডিভিসি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। সমতলভূমিতে এটাই ছিল দেশের প্রথম হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্ট। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন খোলামুখের কয়লা খনিও।
মাইথনে একাধিক থাকার জায়গা রয়েছে। তবে থাকার সেরা ঠিকানা ডিভিসি-র মজুমদার নিবাস। এক্কেবারে নামমাত্র খরচে সেখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মজুমদার নিবাসে ঘর বুক করতে হলে কলকাতায় উল্টোডাঙায় ডিভিসি-র অফিস থেকে বুকিং করতে হবে। যে তারিখে মাইথন যাবেন, তার ঠিক এক মাস আগে ওই তারিখে গিয়ে বুকিং করতে হবে। অবসর সময়ে মজুমদার নিবাস থেকে নদী দেখতে দেখতে সময় কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।