সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আজ ১২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আজ ১২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদন, উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ,এবং সংস্কৃত শাস্ত্রের বিরাট পণ্ডিত ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।যিনি আমাদের কাছে দয়ার সাগর নামে পরিচিত।সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরাজি ভাষাতেও তাঁর বিশেষ দখল ছিল।বিধবা বিবাহ প্রচলন, বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহ রোধ করা এবং সমাজ সংস্কার মূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। একটি ছোট্ট ছেলে, তাঁর মেধা এবং পড়াশুনোয় আগ্রহের সম্মিলিত কারণে বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায়, রাতে রাস্তার ধারে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পড়াশুনো করতো। এই কথিত গল্প আমরা কম বেশি সকলেই ছোটবেলা থেকে শুনে শুনে অভ্যস্ত। হ্যাঁ, এই ছোট্ট ছেলেটিই বয়সকালে হয়ে ওঠেন বিদ্যার সাগর। আজ ২৯শে জুলাই। আজ সমাজ সংস্কারের রূপকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।

ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তখন কে ভেবেছিল বলুন তো যে এই ছেলে বড় হয়ে বর্ণপরিচয় রচনা, বিধবা-বিবাহ প্রথা চালু করার মত এহেন অসাধারণ কাজ করবে? সারা জীবন নারী শিক্ষা , বহুবিবাহ রোধ , বাল্য বিবাহ রোধ, বিধবা বিবাহ প্রচলন এবং বাংলার নবজাগরণের এই অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই মৃত্যু বরন করেন। হ্যাঁ এই বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃত্‍ এই মহান মানুষটির মৃত্যু দিন আজ।

বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামের বাড়িতে মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুরমার সঙ্গে থাকতেন। গ্রামে পড়াশুনো শেষ করে ১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তাঁর পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন ঈশ্বরচন্দ্র। কথিত আছে, পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে তিনি সেগুলি অল্প অনায়াসেই আয়ত্ত করেছিলেন। ১৮৫৬ সালে সরকার বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেন। তার উদ্যোগে একাধিক বিধবা বিবাহের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।তিনি তার পুত্রের সঙ্গেও ভাগ্যহীনা এক বিধবার বিবাহ দেন।

এজন্য সেযুগের রক্ষণশীল সমাজ ও সমাজপতিদের কঠোর বিদ্রুপ ও অপমানও সহ্য করতে হয় তাকে। বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বহুবিবাহের মতো একটি কুপ্রথাকে নির্মূল করতেও আজীবন সংগ্রাম করেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। প্রচার করেন বাল্যবিবাহ রোধের সপক্ষেও। এর সঙ্গে সঙ্গে নারীশিক্ষার প্রচারেও যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। শুধু কলকাতায় নয়, নারীমুক্তির বার্তা বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে, বিভিন্ন জেলাতেও বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করে নারীশিক্ষার সপক্ষে জোর প্রচার চালান তিনি।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ড্রিংকওয়াটার বিটন উদ্যোগী হয়ে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।পরবর্তী জীবনে হিন্দু ল (Law) কমিটির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি ব্যবহৃত হয়।

শেষ জীবনে নিজ-নির্মিত কলকাতার বাদুড়বাগানে বাস করতে থাকেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। প্রসঙ্গত, পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর বাদুড়বাগানের বাড়িতে আসেন, দুজনের মধ্যে ঐতিহাসিক এক আলাপচারিতাও ঘটে। ১৮৯১ সালে ২৯শে জুলাই এই মহারথী পরলোক গমন করেন।বিদ্যাসাগরের কর্মজীবন এবং কৃতিত্বের সম্পর্কে লিখতে গেলে পাতা ফুরিয়ে যাবে কারণ তাঁর কৃতিত্বও তাঁর বিদ্যার মতোই সাগর সমান বিস্তৃত। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে, তৎকালীন বঙ্গ সমাজে তাঁর অবদানকে মনে রেখে ঈশ্বরচন্দ্র বিধ্যসাগরকে সংবাদ টাইমসের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

Leave a Comment