সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক ‘চা বিক্রেতার’ গল্প, চা বিক্রি করেই প্রত্যহ ফুটপাতবাসীদের হাতে তুলে দেন খাদ্যসামগ্রী

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক ‘চা বিক্রেতার’ গল্প, চা বিক্রি করেই প্রত্যহ ফুটপাতবাসীদের হাতে তুলে দেন খাদ্যসামগ্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন, অতিমারী করোনা যেন বিশ্বকে গ্রাস করে নিয়েছে। করোনার আতঙ্কে পুরোপুরি গৃহবন্দী ছিল মানুষ। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করলেও দেশে এখনও করোনার প্রকোপ কমেনি। বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যারা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে, তারা হলেন ফুটপাতবাসীরা। ‘এদের’ নেই বাসস্থান, নেই অর্থ। ভিক্ষা করে কোনওরকমে দিন চালাত ‘এরা’। কিন্তু এই করোনা আবহে তাও বন্ধ। হয়তো করোনা গোটা দেশবাসীর জীবনকে নরক করে তুলছে কিন্তু এরমধ্যে যেটা আমাদের চোখে পড়ছে তা হল সত্যিকারের মানুষের ছবি। যারা এই দুর্দিনে অন্যের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। তবে শুধু যে বিশাল অর্থ রয়েছে তারাই, তা নয়, এগিয়ে আসছে কোনও রকমে দিন যাপন করা মানুষগুলোও। নিজের পেট চালাতে যারা সারা দিন – রাত পরিশ্রম করে। আজ সেই অর্থের ভাগ তুলে দিচ্ছে এই অসহায় মানুষগুলোর হাতে। তামিলনাড়ুর এই চা বিক্রেতা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নিজের স্বল্প উপার্জনের মধ্যেই চেষ্টা করেছেন তার থেকেও গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে।

এই মানুষ রুপি ভগবানের নাম তামিলারসান।যারা বলেন ভগবানকে চোখে দেখিনি, এই অসহায় মানুষগুলো কিন্তু এই মানুষগুলোর মধ্যেই তাঁদের ভগবানকে খুঁজে পান। মাদুরাইয়ের এই চা বিক্রেতা লকডাউনে রোজগারের জন্য প্রতিদিন দুইবেলা বেরিয়ে পড়েন চা বিক্রি করতে। আর তার পথের সাথী তার সাইকেলটি। সঙ্গে আলানকানাল্লুর, মেত্তুপাত্তি, পুদুপাত্তি-সহ কাছের গ্রামগুলোতে চা ফেরি করে বেড়ান। এটাই তাঁর একমাত্র জীবিকা। সকালে, সন্ধ্যায় ঘুরে ঘুরে যা রোজগার হয় তাতেই তাঁর চলে যায়। বেশি চাহিদা নেই তামিলারসানের। কোনওরকমে তার সংসারটা চলেই যাচ্ছিল।

হঠাৎ চা বিক্রি করতে করতে তার চোখে পড়ে রাস্তার পাশে বসে থাকা ক্ষুদার্থ চোখে তাকিয়ে কিছু অসহায় মানুষ। যাদের ঘর নেই, খাদ্য নেই, অর্থও নেই। তাঁদের কষ্টে মন কাঁদে তামিলারসান-এর। তাই তিনি ভাবেন, নিজে নয় আর একটু কষ্ট করে থাকা যাবে। কিন্তু বেঁচে তো থাকবে। তবে এই অসহায় মানুষগুলো না খেতে পেয়ে হয়তো বাঁচতেও পারবে না। তাই তিনি ঠিক করেন, দুঃস্থ এই মানুষগুলোর হাতে সারাদিনে যা উপার্জন করবেন তার মধ্যে কিছু টাকা দিয়ে খাবার কিনে তাঁদের হাতে তুলে দেবেন প্রতিদিন। ভাবা মতোই কাজ। প্রতিদিন বাড়ি ফেরার সময় মানুষগুলোর হাতে কম – বেশি খাদ্য তুলে দেন। তামিলারসানের স্বপ্ন, একদিন তাঁর নিজের একটি দোকান খুলবেন। তখন সাইকেলে করে রোজ বেরোতে হবে না। সেই দোকানেই মানুষগুলোকে বসিয়ে খাওয়াতে পারবেন। এতো ভালো মানুষের স্বপ্ন হয়তো সত্যি একদিন হবেই। তিনিও পাবেন তার ভালো মানুষের উপহার। হয়তো ঠিক একদিন তাঁর সাইকেলের চাকা থেমে যাবে, আর দুর থেকে মানুষ সাইকেল চালিয়ে আসবে তাঁর দোকানে চা খেতে।

Leave a Comment