করোনা মহামারীর মারে গোটা দুনিয়ায় হাহাকার অবস্থা। আর এর দাপট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় মগ্ন। পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশই করোনার প্রতিষেধক হাতে পেতে চায়, এবং সেজন্য গবেষণাও চলছে। বিশেষ করে এমন একটি ভাইরাস যার মারণ ক্ষমতা ইবোলা বা সার্স এর থেকে কম হলেও সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি।
তবে সম্প্রতি অক্সফোর্ড এর একটি টীকা বিজ্ঞানী মহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে, করোনা প্রতিরোধী সেই টিকার নাম চাডক্স-১ এনকোভ-১৯। বৈজ্ঞানিকদের দাবি এটি সম্পূর্ণভাবে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ, এবং ফল যথেষ্ট পরিমাণে আশা জাগানো। প্রথম ধাপে পশুদের শরীরে পরীক্ষা করা হয়, এবং দ্বিতীয় ধাপে খুব অল্প সংখ্যক মানবদেহে এর পরীক্ষা করা হয়, দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার লক্ষ্য থাকে এটি মানব দেহের উপর কতটা সুরক্ষিত সেটা যাচাই করার। এবং এই দুটি ধাপ টিকাটি সফলভাবে উত্তীর্ণ করেছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়েছে, এবং এটি সর্বশেষ ধাপ যেটিতে সফল হলেই এই টিকা মানব শরীরে ব্যবহারের ছাড়পত্র পাবে।
সোমবার ব্রিটিশ পত্রিকা “দ্য ল্যানসেট” -এ চাডক্স-১ এর পরীক্ষামূলক ফল প্রকাশ করা হয়, এবং এটিতে সুস্পষ্টভাবে দাবি করা হয়েছে যেটি টিকাটি যে করোনা প্রতিরোধী শুধু তাই নয় এর কোন তেমন বড় কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। প্রসঙ্গত চাডক্স-১ বিজ্ঞানী মহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল, এবং এই আশানুরূপ ফল গোটা বিশ্বের প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে চাডক্স-১ টিকাটি তেমন বড় কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। শরীরকে করো না থেকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে, এবং তার সাথে তৈরি করেছে টিসেলস, যেটি কাজ করে ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে, অর্থাৎ আবার যদি সেই ভাইরাস শরীরে আক্রমণ করে, তাহলে টিসেলস সেটি শরীরকে জানান দেয় এবং আবার সেই ভাইরাস মোকাবিলার অ্যান্টিবডি শরীর তৈরী করে।
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন ” আমরা আশা করি যে রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা শরীরে তৈরি হবে, টিসেলস এর দ্বারা শরীর ওই ভাইরাস কে মনে রাখবে, এবং পুনরায় আক্রমণের ক্ষেত্রে আবার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে”। এই টিকাটির দুটি ডোজ বেশি কার্যকরী বলে মনে করছেন অ্যান্ড্রু পোলার্ড।
অক্সফোর্ডের দলের আরেক বৈজ্ঞানিক সারা গিলবার্ট জানাচ্ছেন যে কার্যত ছয় বছরের কাজকে ছয় মাসের মধ্যে সারা হয়েছে এবং দিনরাত এক করে এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করা হয়েছে। প্রতিষেধকটির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়াল একসাথে চালনা করা হয়েছে।
তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্রিটেন, আমেরিকা এবং ব্রাজিল মিলিয়ে ৪৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এর উপর এই টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তৃতীয় ধাপের এই ফল পাওয়ার সাথে সাথে সেটি বিশ্লেষণ করে সাধারণ মানুষের ওপর প্রয়োগ করার চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যাবে। পরিকল্পনামাফিক চললে আর দু-তিন মাসের অপেক্ষার পরেই করোনা মুক্তির এই টিকা পেতে পারে বিশ্ববাসী।