ঐতিহাসিক ভ্রমণে ‘গোপগড়’

হুজুগে বাঙালীর পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল ছাড়াও বরাবরই ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আমাদের রাজ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ঐতিহাসিক স্থানে পরিপূর্ণ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ইতিহাস সুদূরপ্রসারীও বটে। কলকাতা থেকে ১৪৭ কিমি দূরে অবস্থিত পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপগড় ইকো পার্ক। এটি বর্তমানে একটি হেরিটেজ সাইট। বর্তমানে এটি ইকো পার্ক হলেও এর ইতিহাস অনেকেরই অজানা। ঘুরতে যদি যান তবে চট করে জেনে নিন এখানকার ইতিহাস।

মেদিনীপুর শহরের প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে গোপ গিরি নামে একটি ছোট পাহাড় আছে। জনশ্রুতি, ঐ স্থানে মহাভারতের মৎস্তাধিপতি বিরাট রাজার “দক্ষিণ গোগৃহ” ছিল। বর্তমান যুগের পণ্ডিতগণ পুরাতন  রাজপুতানার মধ্যে মৎস্তদেশের অবস্থান-নির্দেশ করে থাকেন।

গোপ গিরির অবস্থান দেখলে মনে হয়, এক সময় ঐ স্থানে একটা গড় বা দুর্গ ছিল এবং তারই উপযোগী করে পাহাড়টাকে কেটে ছেঁটে নেওয়া হয়ছে। আইন-ই-আকবরীতে দেখা যায়, সে সময় মেদিনীপুর শহরে দুটি দুর্গ ছিল। প্রাচীনকালে প্রায় একশো বছর আগে, সেই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে উক্ত স্থানের ভূম্যধিকারী তেলিনীপাড়ার বন্ধ্যোপাধ্যায় বংশীর জমিদারগণ গোপ গিরির উপরে এক সুবৃহৎ অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। কালচক্রে তাও এতদিনে ধ্বংসের মুখে এবং সেই ধ্বংসস্তূপই আপনি আজ ‘গোপগড়’ হিসাবে সকলে চেনে। গোপ গিরির উপরে ত্রিকোণমিতিক জরীপের একটা স্তম্ভ আছে এবং গোপ গিরির পাদদেশে পুরাতন বোম্বে রোড়ের উপর  গোপ নন্দিনী নামে এক প্রাচীন দেবীর মন্দির আছে।

এই স্থানে শীতকালীন ভ্রমণই বেশী সুখকর। শীতকালে নানা ফুলের আবরণে ভরে যায় সমগ্র স্থান। বর্তমানে এটি একটি পিকনিক স্পট। দূর থেকে এলেও কোন অসুবিধা নেই এখানে। কারণ এখন কটি টুরিস্ট কর্টেজও আছে পার্কের ভিতরেই। ঐতিহাসিক স্থানে রাত কাটানো রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য মন্দ হবে না। পার্কে ঢোকার সময় দেবদারুর আচ্ছাদন আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ জানাবে। পার্কের ভিতরে রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার।

ইকোপার্কে প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা/প্রতিজন। গোপগড়ে রাত্রিযাপনের ইচ্ছে থাকলে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এর ইকো কটেজ বুক করতে পারেন। ভাড়া ১০০০-১২০০ হতে পারে। কটেজগুলো বেশ সুন্দর।
পিকনিক ছাড়াও এক-দু দিন নির্জনে কাটাতে চাইলে কলকাতা থেকে নিজ গাড়িতে, ঝুলিতে স্যান্ডউইচ ও ফ্লাস্কে কফি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন ঝটিকা সফরে ইতিহাসের খোঁজে লাল মাটির শহরে।

Leave a Comment