বিশ্ব-উষ্ণায়ন ক্রমশ গ্রাস করছে গোটা বিশ্বকে, গলছে গ্রিনল্যান্ডের বরফ

বিশ্ব-উষ্ণায়ন ক্রমশ গ্রাস করছে গোটা বিশ্বকে, গলছে গ্রিনল্যান্ডের বরফ

নিজস্ব প্রতিবেদন, প্রতিনিয়তই নিঃশব্দে গলছে গ্রিনল্যান্ডের বরফ। বিশ্ব-উষ্ণায়ন ক্রমশ গ্রাস করছে গোটা পৃথিবীকে। জুলাই মাসেই প্রায় ১৯ কোটি ৭০ লক্ষ টন বরফ গলে অতলান্তিক মহাসাগরে মিসেছে। ডেনিশ মিটিওরোলজিক্যাল ইন্সটিটিউট-এর গবেষক রুথ মটরাম জানান, উষ্ণায়নের প্রভাবে যে অস্বাভাবিক হারে বরফ গলছে, তা ধরা পড়েছে উপগ্রহ চিত্রে। ইউরোপীয় উপগ্রহ নেটওয়ার্ক সেন্টিনেল-এর এই উপগ্রহ চিত্র চিন্তা বাড়িয়েছে।পৃথিবীর ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য এবং আবহাওয়া বদলের জন্য গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর ভয়ঙ্কর দ্রুততায় হ্রাস পাচ্ছে। এবার সেই তথ্যই ফুটে উঠল সাম্প্রতিক গবেষণাতেও। এই গবেষণা জানাল, বরফের পরিমাণের এই অভাবনীয় হ্রাস পূরণ হবে না কোনোদিনই।

নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি বিভিন্ন চলক বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। যেখানে হিমবাহ গলার কারণে বিশ্বের কোন শহর কতটুকু প্লাবিত হবে সেটি তুলে ধরা হয়েছে। এরূপ গলতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। আর এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশেরও নাম। গ্রিনল্যান্ডের এ বরফ গলা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে কোনো একদিন চট্টগ্রাম ৩ দশমিক ২০ ফুট বা এক মিটার পানির নিচে ডুবে যাবে।আগেই এর প্রভাবে খরা, দক্ষিণাঞ্চলয় ইউরোপের বনাঞ্চলে আগুন লাগাসহ ঘূর্ণিঝড় বেড়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়েছে।

ইউরোপীয় উপগ্রহ নেটওয়ার্ক সেন্টিনেল-এর এই উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, গ্রিনল্যান্ডের বেশ কয়েকটি বড় জলাশয়ের বরফ একেবারে গলে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রায় ৭২ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বরফের পুরু চাদর গলে প্রায় ১০ কিলোমিটারের মতো কমে গিয়েছে, যা দেখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিজ্ঞানীদের কপালে। মাত্র এক বছরের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর অনেকটাই গলে গিয়েছে, যা স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে এই উপগ্রহ চিত্রে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিক গবেষণাও এমনই আশঙ্কার কথা শোনাল। এই গবেষণার সহ-গবেষক প্রফেসর ইয়ার হাওয়াট জানান, গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর ক্রমশ সংকুচিত হয়েই চলেছে। গত ২০-৩০ বছরের আগের আবহাওয়ার অবস্থাতেও যদি আমরা ফিরে যাই তাহলেও আটকানো যাবে না এই ক্ষয়।গবেষণাটি মূলত গত চার দশকের স্যাটালাইট ইমেজিং এবং তথ্যে ওপর ভিত্তি করেই করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেখানেই দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে অস্বাভাবিকভাবেই প্রতিবছর বৃদ্ধি পেয়েছে এই বরফ গলে যাওয়ার পরিমাণ।প্রতিবছর শুধুমাত্র গ্রিনল্যান্ড থেকেই ২৮ হাজার কোটি টন বরফ গলে জল হচ্ছে। যা পৃথিবীর মধ্যে সমস্ত বরফগলনের হারের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষণার প্রধান গবেষক ম্যাকলিয়া কিং।

এদিকে মরু এলাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এ গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর বিশ্বের অন্যান্য যেকোনো জায়গা থেকে দ্বিগুণ গতিতে গলে যাচ্ছে।গ্রিনল্যান্ডের সার্বিক বরফ গলার পরিমাণ গেলো দুই দশকে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০১ সালের মধ্যে গড়ে বরফ গলা পানির পরিমাণ ছিল ৩৪ গিগাটন। তবে ২০০২ সাল থেকে বার্ষিক গড় বরফ গলা পানির পরিমাণ ২৮০ গিগাটনে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র গ্রিনল্যান্ডের কারণেই পৃথিবীর সমুদ্রতল বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতি বছরে ১ মিলিমিটারেরও বেশি। আর এভাবেই সমুদ্রতলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এই শতকের শেষে গিয়ে তা দাঁড়াবে ৩ ফুট বা ১ মিটারের কাছাকাছি। জলের তলায় তলিয়ে যাবে সারা বিশ্বের যাবতীয় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে দ্বীপরাষ্ট্রগুলির জন্য।

বিগত প্রায় দু’ দশক ধরে গ্রিনল্যান্ডের ধারাবাহিক ভাবে বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশিই তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রিনল্যান্ডে আকস্মিক বরফগলনের ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে অদূর অতীতে। এক মুহূর্তেই হঠাৎ ভেঙে পড়েছে বড়ো পরিমাণ বরফের চাঁই। ভবিষ্যতে এই ঘটনার আপতন বিপদ বাড়াতে পারে আকস্মিকই। আগে প্রস্তুত না থাকলে বিপদে পড়তে হবে তীরবর্তী বাসিন্দাদের।

Leave a Comment