কেন্দ্রীয় সরকার কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে তার আগেই নিজের রাজ্যে লকডাউনের মেয়াদ ৩ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করলেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। এ দিন একই পথে চলার কথা শোনা গেছে উত্তরপ্রদেশ সার্জারির কাছ থেকে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু জানায়নি।
লকডাউনের মধ্যেও দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত হু-হু করে বেড়ে চলেছে। মৃত্যুর সংখ্যাও ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ১৪ এপ্রিলের পরেও দেশে লকডাউন জারি রাখার চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় সরকারও। করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সোমবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে একদফা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখতে বলেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ দিনের বৈঠক নিয়ে কথা বলেন কেন্দ্রীয় সরকারের এক আধিকারিক। তিনি জানান, গোটা দেশ থেকে এই মারণ ভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেওয়া ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তাই যে সমস্ত জায়গা করোনার হটস্পট, সেই জায়গাগুলিতে লকডাউন বহাল রেখে, বাকি জায়গাগুলিতে ধাপে ধাপে সমস্ত পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায় কি না, তা নিয়ে পরিকল্পনা ছকে রাখতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন নরেন্দ্র মোদী।
করোনার প্রকোপ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে দেশে ২১ দিনব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। যে দিন প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা করেন, সে দিন সব মিলিয়ে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫১৯। গত ১৩ দিনে তা ৪ হাজার ২৮১-তে গিয়ে ঠেকেছে। সরকারি সূত্রে খবর, দেশে এখনও পর্যন্ত যত জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মূলত ৬২টি জেলা থেকে এসেছেন। আগামী ১৪ এপ্রিল ২১ দিনব্যাপী এই লকডাউনের মেয়াদ যদিও বা শেষ হয়, ওই ৬২টি জেলায় আগের মতোই বিধিনিষেধ চালু রাখা হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো কিছু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরও একই সুরে কথা বললেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে প্রতি মুহূর্তে কী ঘটছে, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বেশ কিছু আধিকারিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখছেন তাঁরা। ঠিক সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।’’
লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু না বলা হলেও, ১৪ এপ্রিলের পরও লকডাউন বহাল রাখা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাবনা চিন্তা শুরু করে দিয়েছে একাধিক রাজ্য, যাদের মধ্যে অন্যতম হল উত্তরপ্রদেশে। রাজ্যকে সম্পূর্ণ ভাবে ভাইরাস মুক্ত না করা পর্যন্ত লকডাউন জারি থাকতে পারে ইঙ্গিত দিয়েছেন সেখানকার অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অবনীশ অবস্থি। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সম্পূর্ণ ভাবে করোনা মুক্ত হলে, তার পরেই লকডাউন তুলে নেওয়া হবে। রাজ্যে এক জন করোনা আক্রান্তও যদি থেকে থাকেন, সেই অবস্থায় লকডাউন তোলা কঠিন হবে। তাই এতে সময় লাগতে পারে।’’
আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে দেশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে মহারাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪৮। মৃত্যুসংখ্যা ৫০ ছুঁইছুঁই। তা সত্ত্বেও মহারাষ্ট্র সরকার ১৪ এপ্রিলের পর লকডাউন জারি রাখার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকে লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও মুম্বই, পুণে-তে বাইরে বেরনোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে খবর। ১৪ এপ্রিলের পর রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় লকডাউন জারি রাখতে চায় কর্নাটক সরকারও। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন রাখতে পারে তামিলনাড়ু সরকারও।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সামাল দিতে লকডাউন ঘোষণা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের আর কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু তার জেরে গত কয়েক দিনে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পোহাতে হয়েছে। দেশে খাদ্য সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। তাই কিছু ক্ষেত্রকে ফের স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্র যাতে সচল থাকে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ এপ্রিলের মাঝামাঝি ফসল কাটার সময় । আংশিক ভাবে বিমান পরিষেবাও চালু করা হতে পারে। রেল দপ্তরও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রেল পরিষেবাকে যাতে ১৫ ই এপ্রিল থেকেই শুরু করা যায় ।