হাথরাস কাণ্ডে উত্তর প্রদেশের পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ

হাথরাস কাণ্ডে উত্তর প্রদেশের পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদন, ধর্ষিতই হননি হাথরাসের নিহত দলিত তরুণী! ফরেন্সিক রিপোর্ট খাড়া করে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন এক পুলিশ অফিসার। যা ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।হাথরাসের ঘটনা নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে, তখন উত্তরপ্রদেশের পুলিশ হঠাৎ এমনি দাবি তোলেন।ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা হয়েছে, সি৬ কশেরুকা (ঘাড়ের অংশে থাকা কশেরুকা) ভেঙে গিয়েছিল। ওই জায়গা থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত ঘটেছিল। চিকিৎসকদের মতে, মেরুদণ্ডে আঘাত, সেপসিস এবং হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া— এই তিন কারণে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার।

ফরেন্সিক রিপোর্ট খাড়া করে পুলিশ অফিসার জানান, ”ফরেন্সিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার শরীরে কোথাও কোনও বীর্য পাওয়া যায়নি, তাই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠছিল, তা সম্পূর্ণ ভুল।” তবে বিশেষজ্ঞদের পাল্টা দাবি, “তদন্তের স্বার্থে অনেকক্ষণ ধরে তাঁর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল, ফলে বীর্যের অস্তিত্ব না পাওয়াই স্বাভাবিক। তার মানে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি সঠিক নয়”। পুলিশ আরও দাবি করেছে, তরুণীর জিভ কেটে নেওয়া হয়নি। গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানোয় জিভ বেরিয়ে এসেছিল। তরুণী নিজেই জিভ কামড়ে ফেলেন। সরকারি ফরেনসিক বিভাগের এক অফিসার একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‌ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে তরুণীর গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তা কত পুরনো, বলা হয়নি। ওই আঘাত হয়তো চিকিৎসার সময় সেরে গেছে। তবে মৃত্যুর কারণ যেহেতু ধর্ষণ নয়, তাই রিপোর্ট সেই বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। সেরোলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা চলছে।’‌

উত্তরপ্রদেশ পুলিসের এডিজি ল অ্যন্ড অর্ডার প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন, নির্যাতিতার শরীরে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ নেই। তবে হাথরসের নির্যাতিতাকে কে বা কারা নৃশংসভাবে খুন করেছে তার তদন্ত করা হচ্ছে।অকারনেই ধর্ষণের প্রসঙ্গ তুলে যারা পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে রাখল পুলিস। এই কাণ্ডের পর প্রথম থেকেই উত্তরপ্রদেশের পুলিস ব্যাকফুটে ছিল। তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল তদন্তের জন্য। নির্যাতিতার সঙ্গে নৃশংসতার খবর দেশবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

এবার উত্তরপ্রদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে উঠে আসছে বহু প্রশ্ন-

১। তাহলে কি উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ধর্ষণের বিষয়ে ভারতের বিচার বিভাগের বিরোধিতা করছেন?
কারণ সেখানে উল্লেখ আছে ধর্ষণের বিষয়ে ভারতের আইনশাস্ত্র স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে স্বাবলম্বীর নমুনায় বীর্যপাতের অভাবে ধর্ষণকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। ২০১২ সালে বোম্বাই হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, যে ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণের জন্য বীর্যপাতের প্রয়োজন নেই। তাহলে এক্ষেত্রে কেন এরম বলা হচ্ছে?২। যুবতীর মেডিকেল টেস্ট অনেক দেরিতে করানো হয়, তাহলে সেই রিপোর্টের মাধ্যমে কিভাবে পুলিশ সঠিক ফলাফল পেতে পারে?এক্ষেত্রে যুবতী বয়ান দেওয়ার পর তাঁর মেডিক্যাল টেস্ট করানো হয়, তাও তিনদিন পর করা হয়েছিল। ঘটনাটি টেস্টের ১১ দিন আগে ঘটেছিল।

৩। রিপোর্টে ভার্জিনাল আঘাত দেখা গিয়েছে, কিন্তু সেখানে সেটি কতদিন আগেকার তা উল্লেখ করা হয়নি। তাহলে সেটি অনেকদিনের পুরোনো বলে কি করে পুলিশ দাবি করছে? ৪। কেন পুলিশ সঠিক প্রমান জোগাড় করেনি? যেখানে তাঁর মা এফআইআর দায়ের করেছিলেন, গোটা ঘটনাটি পুলিশের সামনে বলেওছিলেন। কিন্তু তাঁর মা বলার সময় কোথাও ধর্ষণ শব্দটি ব্যবহার করেননি। কিন্তু সেসময় পুলিশ আধিকারিক প্রশান্ত কুমার জানান, যুবতীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।তাহলে কিছু প্রমান ছাড়াই কি এরূপ দাবি করা হয়েছিল?

৫। কেন তাড়াহুড়োর মধ্যে যুবতীর দেহ সৎকার করা হল? পরিবারকে কেন উপস্থিত থাকতে দেননি এবং তাঁদের অনুরোধ শোনা হয়নি ? রাতে সকলের অনুপস্থিতিতে সৎকার করা হয়, যা ক্যামেরায় ও পরিবারের সদদ্যদের কথায় প্রমান মেলে। ৬। ইউপি পুলিশ অপরাধের স্থানটি কেন সিল করল না? নির্যাতিতার ভাই-এর দাবি, ঘটনার জায়গাটি কোনও সিল করা হয়নি, যে কেউ সেখানে ঢুকতে পারছে। সেখানে হতে পারে আরও কিছু প্রমান মিলতে পারত, যা আর পাওয়া নাও যেতে পারে। ৭। গোটা ঘটনাটি সাজালে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের কাজে নানান ফাঁক রয়েছে। তাহলে কি পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত নিয়ে অবহেলা করছেন?

Leave a Comment