৮৭-র মেলোডি কুইন

আশা ভোঁশলে- ভারতীয় সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৪৩ সাল থেকে আরম্ভ করে দীর্ঘ ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে চলেছেন সমগ্র ভারতীয় সঙ্গীত জগতে। আজ ৮ই সেপ্টেম্বর। ১৯৩৩ সালে এমনই এক শুভ লগ্নে মেলোডি কুইন মহারাষ্ট্রের সঙ্গীল নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৮৭তম জন্মদিন। বিখ্যাত গায়িকা ছাড়াও দুনিয়া যাকে এক ডাকে চেনে ‘ভারতের নাইট্যাঙ্গেল’ লতা মঙ্গেশকরের বোন রূপে। তাঁর সঙ্গীত জীবনে তিনি ৯২৫ টির ও বেশি সিনেমায় গান গেয়েছে। তাঁর গানের সংখ্যা প্রায় ১২০০০ এর ও বেশি যা তাকে গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে সব থেকে বেশি গান রেকর্ডকারী হিসাবে ঘোষণা করে ২০১১ সালে। ২০০৮ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে।

মাত্র ৯ বছর বয়েসে পিতৃহারা মেয়েটি সপরিবারে মুম্বাইয়ে চলে আসে। লতা দিদির সাথে গলা মিলিয়ে চলচ্চিত্রে গান ও অভিনয় করা শুরু করে সংসারের দায়িত্ববহনের জন্য। তাঁর গাওয়া প্রথম গানটি হলো মারাঠি ভাষায় ‘মাঝা বল’ চলচ্চিত্রে (১৯৪৩) ‘চল চল নব বল’ যার সুরকার ছিলেন দত্ত দবজেকর। তাঁর হিন্দী চলচ্চিত্রে প্রবেশ হয় হনসরাজ বেহলের ‘চুনারিয়া’ ছবির ‘সাবান আয়া’ গানের মাধ্যমে। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক হিট ছবিতে সুপার হিট গানে মাতিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমা। শচিন দেব বর্মনের পুত্র রাহুল দেব বর্মনের সাথে দ্বিতীয় বার বিবাহ করেন। তাঁদের হাত ধরে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গীত জগতে এলো পশ্চিমী গানের ছোঁয়া। রক,ক্যাবারে,ডিস্কো গানে মেতে উঠেছিলো বলিউড। ‘পিয়া তু আব তো আজা’, ‘ইয়ে মেরা দিল’, ‘দম মারো দম’ আরও নানান গান যা এখনো পুরানো হয়নি, ভবিষ্যতেও হবেনা। নবীন মিউজিক ডিরেক্টর দেরও ১নং লিস্টে তিনি। ১৯৯৪ তে এ আর রহমানের হাত ধরে কামব্যাক করেন নতুন রূপে রঙ্গিলা ছবির গানে। তারপর লাগান ছবিতে ‘রাধা ক্যায়সে না’, তক্ষক ছবিতে ‘মুঝে রঙ দে’ খুবই জনপ্রিয়। বাংলা ছবিতেও তিনি সর্বকালেই সেরার সেরা। মন ছুঁয়ে যাওয়া গানগুলি হলো ‘চোখে নামে বৃষ্টি’, ‘মনের নাম মধুমতী’, ‘মহুয়ায় জমেছে আজ’, ‘ যেতে দাও আমায় ডেকো না’ ইত্যাদি।

১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সাতবার ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ড এ বেস্ট প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসাবে পুরষ্কৃত হন। ২০০১ সালে তিনি ফিল্মফেয়ারের লাইফটাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড পান। এছাড়াও অসংখ্য এওয়ার্ড তাঁর সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসাকে সন্মান জানিয়েছে।

আজ ৮৭ তেও তিনি বয়সকে তোয়াক্কা না করে সকলকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। সকলের ভালোবাসাই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার,এমনটাই তিনি মনে করেন। তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র হলো আরও এগিয়ে যেতে হবে, গান গেয়ে যেতে হবে।

Leave a Comment