লকডাউনে অসহায় বৃদ্ধাকে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন মুসলিম ভাইরা, ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতার নজির

লকডাউনে অসহায় বৃদ্ধাকে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন মুসলিম ভাইরা, ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতার নজির

নিজস্ব প্রতিবেদন, করোনা আবহে দেশে গরিব অসহায় মানুষদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। রাস্তার ধরে শুয়ে কত মানুষ খাদ্যাভাবে দিন কাটাচ্ছেন। এরূপ অবস্থায় এই মানুষগুলোর একমাত্র ভরসা সাবলম্বী মানুষগুলোর সাহায্য। আজ অতিমারীর সময় কিছু মানুষের হাত ধরেই অধিকাংশ এই দুঃস্থ মানুষগুলো নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পাচ্ছেন। করোনা কালে এমনই এক মানবিক ঘটনা সামনে এল। যা সত্যি ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতার নজির গড়ল। পূর্ব বর্ধমান জেলার দাইহাট শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামপাড়ায় গত চার মাস ধরে একটি বাড়ির খোলা বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন সত্তর ছুঁইছুঁই অমলা ঘোষ।অসহায় বৃদ্ধার কাছে নেই কোনও অর্থ, মাথায় নেই ছাদ। বয়স নেহাত কম নয়, এই বার্ধক্য বয়সে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি। এই করুন অবস্থায় বৃদ্ধাকে খাবার জোগাচ্ছেন সোনাই খাতুন, রচুল শেখরা।

ধর্মের কথা এখানে না তুললে হয়তো ঘটনাটা পরিষ্কার হবে না। যেখানে আজ মানুষ সর্বদা নিজ ধর্মের নামে কাজ করেন, একে অন্যের ধর্মের বিরোধিতা করেন। সেখানে এই অসহায় বৃদ্ধার ধর্ম হিন্দু, আর এই পরিস্থিতিতে যাঁরা তার খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন, তাঁদের ধর্ম মুসলিম। কিন্তু একদিনও এই বৃদ্ধাকে অনাহারে থাকতে হয়নি। কারণ মুসলিম সম্প্রদায় অধ্যুষিত মোকামপাড়ার লোকজনই পালা করে অমলাদেবীর খাবার পৌঁছে দিয়ে আসছেন এই কয়েকমাস ধরে।মাসচারেক ধরে দাঁইহাট মোকামপাড়ায় একটি বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। মোকামপাড়ার বাসিন্দা রচুল শেখ, সোনাই খাতুনরা বলেন, “ওই অসহায় বৃদ্ধা (Old lady) আমাদের পাড়ায় আশ্রয় নেওয়ার পর এখান থেকে আর কোথাও যাননি। লকডাউনের সময় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করার মতো পরিস্থিতি নেই।তাই আমাদের পাড়ার লোকজনরা পালা করে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসে তাঁকে।” মোকামপাড়ার বাসিন্দারা চাইছেন সরকারিভাবে কোনও আশ্রয়স্থলে রাখার ব্যবস্থা করা হোক এই বৃদ্ধাকে।

জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধার অমলা ঘোষ-এর বাড়ি দাঁইহাট শহরের বেড়া শিবতলাপাড়ায়। প্রায় ১৮ বছর আগে স্বামী মারা যান। নিঃসন্তান মহিলার তিনকূলে কেউ নেই। বাপেরবাড়ি দাঁইহাট শহরেই। বাবা মারা যাওয়ার পরে সেই বাপেরবাড়ির ভিটাও বিক্রি হয়ে যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পরে তাই উপায়ন্তর না দেখে অমলাদেবী চলে যায় পাঞ্জাব। সেখানে রান্নার কাজ করে নিজের পেট চালাচ্ছিলেন। বছর দেড়েক আগে অমলাদেবী চলে আসেন দাঁইহাটে। কিন্তু কোথায় উঠবেন। তাই ঘোরাঘুরি করেই কাটছিল। স্থানীয় বাসিন্দা বাবন ঘোষ জানান, “দেড় বছর আগে পাঞ্জাব থেকে ফিরে আসার পর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি। আমাদের এলাকার কয়েকজন মিলে কিছু টাকা দিয়ে অমলাদেবীকে ফের পাঞ্জাবে ফিরে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করি। কারণ পাঞ্জাবে তাঁর পরিচিত রয়েছেন। কিন্তু তার কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ফের ফিরে আসেন। মাস সাতেক আগে ফেরার পর থেকে আর কোথাও যাননি।”

Leave a Comment