জাপানের একটি তেলবাহী জাহাজ এমভি ওকাশিও ভারত মহাসাগরের একটি অগভীর অংশে ঢুকে পড়ে ২৫ শে জুলাই। প্রবাল প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে ফাটল ধরে জাহাজে, ৬ অগাস্ট থেকে গ্যালন এর পর গ্যালন তেল মিশতে থাকে সমুদ্রের জলে। তখনই অশনিসংকেত গুনেছিলেন বৈজ্ঞানিকেরা। এরপর গত পরশু মরিশাসের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসে বেশকিছু ডলফিন এর মৃতদেহ, যদিওবা এই ডলফিনগুলোর মধ্যে কিছুর দেহে তখনও প্রাণ ছিল কিন্তু তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল।
মরিশাসের মৎস্য মন্ত্রকের মতে মারা গিয়েছে প্রায় ১৭ টি ডলফিন, ইতিমধ্যেই পরিবেশ সংস্থা গ্রিনপিস ওই এলাকায় রয়েছে, গ্রিনপিস আফ্রিকার বৈজ্ঞানিক টেইল হারিস বলেছেন ” মনে হচ্ছে আরো অনেক ডলফিন মারা গিয়েছে”। তবে এই ঘটনা যে ওই এলাকার সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর একটা চরম আঘাত হেনেছে তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। শুধুমাত্র ডলফিন নয়, এর প্রকোপে ওই সামুদ্রিক এলাকার সমস্ত জীবন্ত প্রাণী থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলায় থাকা প্রবাল প্রাচীরের ও চরম ক্ষতি হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্ত নিয়ে এখনো পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে মরিশাসের সরকার। ডলফিন এর দেহগুলোকে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে ডলফিনগুলোর গায়ে পুরু তেলের আস্তরণ ছিল। কিন্তু মরিশাসের মৎস্য মন্ত্রকের মুখপাত্র জ্যাসভিন সাক জানান ” ডলফিন এর গায়ে কোন তেল এর আস্তরণ লক্ষ করা যায়নি, প্রত্যেকটি ডলফিন এর গায়ে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল এবং চুয়াল এর চারপাশে রক্ত ছিল”। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী ডলফিন গুলির গায়ের তেলের আস্তরণ এতটাই পুরো ছিল যে তাতে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ছিদ্রটি অব্দি বন্ধ হয়ে গেছিল।
জাহাজটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার ৩২ দিন কেটে গেছে, প্রথমদিকে কাঁকড়া, কচ্ছপ ইত্যাদির মৃতদেহ ভেসে আসলেও গত দু’দিন ধরে ডলফিন এর দেহ ভেসে আসার সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। গত ১১ই আগস্ট এর উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ে যে দুর্ঘটনাস্থলের ১৪ মাইল উত্তর পর্যন্ত সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়েছে তেল। সামুদ্রিক জীবন বাঁচাতে সরকার তৎপর হলেও বিপর্যয় মোকাবিলা যে সঠিকভাবে করা যায়নি সেই দিকে আঙ্গুল তুলেছে পরিবেশবিদরা। শুধু ডলফিন নয় ওই অঞ্চলের সামুদ্রিক ফ্লোরা এবং ফনা, সবকিছুই বিপর্যয়ের মুখে।