নতুন ছন্দে ফিরবে পুরী

বাঙালির প্রানকেন্দ্র জগন্নাথ ধাম পুরী এবার যেন হারিয়েছে আগের জৌলুস। এ তো হওয়াই স্বাভাবিক। করোনা প্রকোপে পুরী স্পেশাল ট্রেনের ও অর্ধেক বার্থ ফাঁকা। সেই দেখেই তো বোঝা যায় যে পুজোর মরশুমে যেখানে দীঘা, মন্দারমণিতে পা ফেলার জো নেই, সেখানে বাঙালির সেকেন্ড হোম পুরি যেন প্রাণহীন সমুদ্রতীর। ধু ধু বালুরাশি যেন পর্যটকের আশায় দিন গুনছে৷ এ যেন এক অচেনা পুরী।

পুজোর সময়কার পুরীর ছবি অন্য বছরের সাথে একেবারেই মেলানো যাচ্ছে না। হোটেল না পাওয়ার ভয়ে যেখানে মানুষ কয়েকমাস আগে থেকেই বুকিং সেরে রাখতেন সেখানে আজ ফাঁকা হোটেলের মালিকরা সুদিনের আশায় দিন গুনছে। ভোর হলেই একটাই সূর্যকে বারবার ভিড় ঠেলে দেখার লোকও হাতে গোনা। নিয়মবিধি মানার মতো ভিড় ও নেই। বিশাল সমুদ্র তটে কয়েকশো লোক স্নান করলে, ঘুরে বেড়ালে এমনিতেই সোস্যাল ডিস্টেন্সিং মানা খুবই সহজ। সি-বিচের ধারে অস্থায়ী চায়ের দোকান, টিফিন স্টল আজ প্রায় সবই বড়ো বড়ো প্লাস্টিকের আচ্ছাদনে শায়িত। অন্যান্য বছর ভোর ৪ টে থেকেই অস্থায়ী চায়ের দোকানের বেঞ্চে ভিড় জমে যায় বাঙালি বাবুদের। এমনকি রোড সাইড টিফিনের দোকানেরও অভাব। মার্কেটেও চূড়ান্ত মন্দা। লকডাউন শিথিল হলেও এখনো কিছু দোকান বন্ধ। খোলা দোকানেও ভিড় খুবই কম। দোকানদাররা তাও পর্যটক ডাকতে উৎসাহী। সি বিচের ধারের পান-বিড়ি-জল বিক্রেতারা বলছেন বিক্রি এতোই কম যে মিনারেল ওয়াটার কোম্পানি গুলি জল সাপ্লাইও কমিয়ে দেয়েছে পুরীতে।

এরপরে যদি শোনেন সাইড ট্যুরের কথা আরও হতাশ হবেন। হোটেল গুলি থেকে বিশেষ অফার দেওয়া সত্ত্বেও হচ্ছে না ভিড়। পুরী গিয়ে কোনারক মন্দির যাবেন না এমনটা কি ভেবেছেন কখনো? কোনারক মন্দিরে এক সঙ্গে ৫০ জনের বেশি প্রবেশ নিষেধ। ফকে বাইরে জমছে লাইন। তাই আগ্রহ হারাচ্ছে পর্যটকরা।

পুরীতে প্রায় সারাবছরই সমুদ্রতটে মেলা বসে। মেলায় তো পা রাখা দায় হয়। তাছাড়া শঙ্খ বিক্রেতাদের ক্রমাগত ডাক, মিষ্টি ওয়ালাদের সুরেলা হাঁক-ডাক, প্লাস্টিক বিছিয়ে সপরিবারে জমিয়ে আড্ডা সবই যেন আজ অতীত৷ সব থেকে বড়ো কথা হলো জগন্নাথ দেবের দেখাও যে মিলছে না সেভাবে। তাই কোন টানে আসবে বাঙালি সেটাই তো ভাবনার বিষয়।

তবে প্রত্যেকেই আশাবাদী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হকে আবার পুরী ফিরবে তার নিজ ছন্দে৷ আবার ভিড় জমবে বিচে, মেলা জমাবে সককে, ব্যাবসা চলবে আগের মতো, সমুদ্রের ঢেউয়ে আবার মেতে উঠবে সকল পর্যটকের মন।

Leave a Comment